Places to Visit in Purulia
পুরুলিয়া বেড়াতে এসে কী কী দেখবেন ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন পুরুলিয়াতে দেখার মতো কি কি জায়গা আছে ? পুরুলিয়া যারা প্রথমবার আসেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই পুরুলিয়ার বিভিন্ন টুরিস্ট সার্কিট নিয়ে কোনও স্পষ্ট ধারনা নেই। আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর আশা করি আপনার পুরুলিয়া সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা করে উঠবে। পুরো জেলার সমস্ত সার্কিট ভালোভাবে ঘুরতে গেলে এক সপ্তাহও কম পড়বে। তাছাড়া বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পুরুলিয়ার ভিন্ন ভিন্ন রূপে সেজে উঠে। বর্ষায় এলে যেখানে পাহাড়-জঙ্গল চারিদিক সবুজময় হয়ে উঠে, বসন্তে এলে দিগন্ত বিস্তৃত আঙুন রাঙা পলাশের ফুলে চারদিক লাল হয়ে উঠে, ছয়মাস আগে দেখা সেই চেনা যায়গাটিও অচেনা মনে হবে।
আপনার হাতে যদি কম সময় থাকে তখন পুরুলিয়ার বিভিন্ন সার্কিট গুলোর মধ্যে যে কোনও একটা বা দুটো বেছে নিন, যেগুলো আপনার দেখা নেই। বাকী সার্কিট গুলো পরের ট্রিপে দেখবেন। প্রথমবার পুরুলিয়া এলে বলবো অযোধ্যা সার্কিট আসুন। একসাথে সব সার্কিট দেখা বেশ অসুবিধা ও সময়সাপেক্ষ। এই ওয়েব পেজের নিচেই দেওয়া রয়েছে টুরিস্ট গাইড ম্যাপ। এতে গুগল ম্যাপের উপর জেলার বিভিন্ন স্পটগুলোকে দেওয়া আছে। নীচে সার্কিট অনুযায়ী স্পটগুলোর বর্ণনা দেওয়া হল....
অযোধ্যা সার্কিট (বাগমুন্ডি ও ঝালদা)
পুরুলিয়া তথা দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হলো অযোধ্যা পাহাড়। রেলপথে অযোধ্যা পাহাড় আসার জন্য সুবিধেজনক নামবার স্টেশন হলো বরাভূম বা পুরুলিয়া। দুই স্টেশন থেকে গাড়িতে এক থেকে দেড় ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন অযোধ্যা পাহাড়ে। পুরুলিয়া শহরের দিক থেকে আসতে হলে সিরকাবাদ হয়ে আর বরাভূম স্টেশনের দিক থেকে আসতে গেলে বাঘমুন্ডি হয়ে আসতে হয়। তবে সিরকাবাদ দিয়ে উঠার পথটা বেশ মনোমুগ্ধকর। সবুজের সমারোহ, পাহাড়ি বাঁক আর স্থানীয় আদিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন হিলটপে।
কি কি দেখবেন এখানে এলে ?
এই সার্কিট এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্পট গুলি হল অযোধ্যা পাহাড়ের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র (আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম), ছৌ মুখোস তৈরির জন্য বিখ্যাত চড়িদা গ্রাম, খয়রাবেড়া ড্যাম, মুরগুমা ড্যাম, মার্বেল লেক, বামনী ফলস, ঠুড়গা ফলস, ময়ুর পাহাড় প্রভৃতি। এগুলো ছাড়া বেশ কিছু সাইট সিইং স্পট আছে.. উসুলডুংরি সানরাইজ পরেন্ট, সীতাকুণ্ড, লহরিয়া শিব মন্দির, চেমটাবুরু, মাছকান্দা ঝরনা, বাড়েডি ঝরনা, মাঠা ফরেস্ট, দুয়ারসিনি ফরেস্ট (পুরুলিয়াতে একাধিক দুয়ারসিনি আছে, এটা সাতগুড়ুমখ্যাত দুয়ারসিনি নয়), মুররাবুরু (পাখি পাহাড়), পারডি লেক, কুমারীকানন, সুইসা, দেউলি ইত্যাদি। দুই থেকে তিন দিন লাগবে এই সার্কিটের সব জায়গাগুলি ভালোভাবে ঘুরতে। এছাড়া ঘুরে আসতে পারেন ঝালদার কালী পাহাড়, বানসা পাহাড়, তুলিন, কুকি ড্যাম, জারগো, খামার, নহরাহারা, বেগুনকোদর প্রভৃতি। একদিনের ট্যুর হলে পুরুলিয়া শহর থেকে করে অথবা বরাভুম স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে সারাদিন ঘুরে আবার স্টেশনে ফিরে যেতে পারেন। তবে ভালোভাবে ঘুরতে চাইলে বা পাহাড়ে ট্রেকিং করতে চাইলে অন্তত এক-দুদিন নাইট স্টে করতেই হবে। মাঠা, বাগমুন্ডী, হিলটপ, মুরগুমা, চড়িদা, খয়রাবেড়া সবজায়গাতেই থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে। আপনার পছন্দসই যেকোনো জায়গায় রাত্রিযাপন করে গাড়িতে করে সব দেখে নিতে পারেন।
Ajodhya Hills
Charida Village
Murguma
গড়পঞ্চকোট সার্কিট
প্রকৃতি আর ইতিহাসের এক অপুর্ব যুগলবন্দী গড়পঞ্চকোট। পুরুলিয়া জেলার মুলত উত্তরের পর্যটনকেন্দ্রগুলিকে নিয়ে পঞ্চকোট রাজাদের রাজধানীকে কেন্দ্র করে এই সার্কিটটি গড়ে উঠেছে। পঞ্চকোট রাজবংশ মানভূম-পুরুলিয়ার প্রাচীন রাজবংশ। প্রায় ১,৯০০ বছর আগে ঝালদায় এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হয়। ঝালদা, পাড়া, গড়পঞ্চকোট, মহারাজনগর, রামবনি, কেশরগড় এবং সর্বশেষ কাশীপুর— এই সাতটি রাজধানী থেকে বিভিন্ন সময় পঞ্চকোটের রাজারা শাসন করেছেন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, ধানবাদ, বোকারো ও রাঁচি জেলার ২,৭৭৯ বর্গমাইল এলাকায় পঞ্চকোটের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই রাজদরবারে একসময় ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তাছাড়া সিপাহী বিদ্রোহের সাথেও এই রাজপরিবারের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে যোগ দেওয়ার অভিযোগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পঞ্চকোটের মহারাজা নীলমণি সিংহদেওকে জেলে বন্দি করেছিল। সেসব গল্প নাহয় অন্য একদিন বলব।
কি কি দেখবেন এখানে এলে ?
গড়পঞ্চকোট, বড়ন্তী (মুরাডি), পাঞ্চেত, কাশীপুর রাজবাড়ী, সত্যজিৎ রায়ের হীরক রাজার দেশ খ্যাত জয়চন্ডী পাহাড়ও রয়েছে এই সার্কিটেই। এছাড়াও রঞ্জনডি জলাধার, কোশজুড়ি, পাহাড়পুর, তেলকুপি, বান্দা দেওল, বেড়ো এই সার্কিটের অন্যতম আকর্ষণ। সময় থাকলে ঘুরে নিতে পারেন মাইথন ড্যাম (ঝাড়খণ্ড), বিহারীনাথ পাহাড় (বাঁকুড়া জেলা)- ও। এক থেকে দুই দিনের ট্যুরে কভার করতে পারবেন বেশিরভাগ জায়গুলোই। তবে ইতিহাসের নেশা থাকলে দুদিনেও কুলোবেনা। ট্রেনে এলে আদ্রা বা আসানসোলে নেমে গাড়ি নিতে পারেন। তবে মাইথন আগে ঘুরতে চাইলে কুমারডুবি বা বরাকর স্টেশনেও নামতে পারেন। থাকতে চাইলে জয়চন্ডী, পাঞ্চেত, বড়ন্তীতে প্রচুর গেস্ট হাউস রয়েছে। এখানে জয়চন্ডী বা বেড়ো পাহাড়ে বিভিন্ন সময় রক ক্লাইম্বিং বা মাউন্টেনিয়ারিং কোর্স করানো হয়ে থাকে, শিখতে চাইলে তার জন্য আগে থেকে খোঁজ নিতে হবে।
Garpanchakot
Kashipur Rajbari
Joychandi Pahar
দক্ষিন পুরুলিয়া সার্কিট (বান্দোয়ান ও মানবাজার)
বান্দোয়ানের দুয়ারসিনি, মানবাজারের দোলাডাঙা, দুর্গাডি ও পুঞ্চার পাকবিড়রাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সার্কিট। পাকবিড়রাকে এক কথায় ‘পুরুলিয়ার জাদুঘর’ বললে ভুল হবে না। জেলায় যত জৈন তীর্থকেন্দ্র আছে, এটি সর্ববৃহৎ। একই স্থানে এত অজস্র মূর্তি পুরুলিয়ার অন্যত্র দেখা যায় না। এছাড়াও পাকবিড়রাতে রয়েছে মানভূমের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি হিসেবে ভাষা স্মারক স্তম্ভ।
কি কি দেখবেন এখানে এলে ?
দুয়ারসিনি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র, কুইলাপাল ফরেস্ট, দুর্গাডি ইকো ট্যুরিজম সাইট, দোলাডাঙা ছাড়াও সম্প্রতি ঝরনা কোচা, ভালুর ড্যাম (টটকো জলাধার), সৃজন ডুংরি, হাতিপাথর (জিতুজুড়ি), বুধপুর, পাকবিড়রা সহ একাধিক জায়গাকে ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। বাসে করে এলে বান্দোয়ান বা মানবাজারে নেমে গাড়ি নিতে পারেন। স্টে করার জন্য দুয়ারসিনিতে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর কটেজ রয়েছে, দুর্গাডিতে পঞ্চায়েত দপ্তরের গেস্ট হাউস আছে। তাছাড়া, বান্দোয়ান, মানবাজারেও থাকতে পারেন। একদিনের বেশি প্ল্যান থাকলে সাথে গালুডি, ঘাটশিলাও (ঝাড়খণ্ড) একসাথে ঘুরে নিতে পারেন।
Duyarsini
Pakbirra
Durgadih
পুরুলিয়া শহর সার্কিট
পুরুলিয়া শহর কেন্দ্রিক ভ্রমন সূচীর জন্য পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে পারেন সাহেব বাঁধ, সুভাষপার্ক, জেলাবিজ্ঞান কেন্দ্র, হরিপদ সাহিত্য মন্দির ও মিউডিয়াম, নিস্তারিণী কলেজ প্রভৃতি। পুরুলিয়া শহরে জলের বন্দোবস্ত করার জন্য মানভূমের ডেপুটি কমিশনার (১৯৩৮) কর্নেল টিকলে জেলের বন্দিদের দিয়ে সাহেব বাঁধ খোঁড়ানো হয়েছিল। প্রায় ৮৫ একর জুড়ে এই বিস্তৃত সরোবরে প্রচুর পরিযায়ী পাখিদের দেখা মিলত। সম্প্রতি সাহেববাঁধে শুরু হয়েছে শিকারা ভ্রমন। কাশ্মীরের একটি কোম্পানির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এই প্রমোদ ভ্রমনের ব্যাবস্থা করছে পুরুলিয়া পুরসভা।
শহর থেকে স্বল্পদুরত্বে যে সব জায়গাগুলো ঘুরে আসতে পারেন, তা হলো সুরুলিয়া ডিয়ার পার্ক, মহাদেব বেড়্যা (জৈন তীর্থক্ষেত্র), ফুটিয়ারি ড্যাম, তিলাবনী পাহাড় ,পাতলই ড্যাম, রাকাব ফরেস্ট, কেশরগড়,ছড়রা এরোড্রাম, জয়পুর পাথরবাড়ি, দেওলঘাটা, আঘোরপুর ডুংরি, বেলকুঁড়ি ফিল্ম শ্যুটিং জোন, কংসাবতী নদী, চাকলতোড় প্রভৃতি। পুরুলিয়া শহরে থেকে করে ২-৩ দিনে সবকটা স্থান দেখে নিতে পারেন। কিংবা পুরুলিয়া শহর থেকে বিভিন্ন সার্কিটে যাওয়ার পথেও এই স্থানগুলো ঘুরে যেতে পারেন।
Saheb Bandh
Deolghata
Surulia Mini Zoo
New Offbeat Destinations
Ghatbera
Hatimara Village
Doladanga
Tilabani